আল কুরআন – যুগের জ্ঞানের আলোকে অনুবাদ ও মৌলিক তাফসীর (সচিত্র)
পৃথিবীর কোনো কুরআনের অনুবাদ গ্রন্থে ‘যুগের জ্ঞানের আলোকে অনুবাদ’ কথাটি লেখা নেই। কী চিন্তার ভিত্তিতে এ নামটি দেওয়া হয়েছে এবং বাস্তবে তা করা হয়েছে সেটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে অনুবাদটির মুখবন্ধে। এখানে শুধু এটুকু বলা যথেষ্ঠ যে- কুরআনের আরবী আয়াত সর্বদা অপরিবর্তিত থাকবে কিন্তু তার অনুবাদ ও ব্যাখ্যা যুগের জ্ঞানের আলোকে উন্নত হবে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের বইসহ পৃথিবীর সকল ব্যাবহারিক গ্রন্থের যুগের জ্ঞানের আলোকে নতুন সংস্করণ বের করা হয় এবং তা মানব সভ্যতার জন্য অধিক কল্যাণ বয়ে আনে। কুরআন নামক ব্যাবহারিক গ্রন্থেরও যুগের জ্ঞানের আলোকে অনুবাদ লিখতে হবে এবং তার সংস্করণও বের করতে হবে। এতে মানব সভ্যতা কুরআন থেকে অধিক মাত্রায় কল্যাণ পেতে থাকবে। এ জন্যই আল্লাহ তা’য়ালা বার বার কুরআন নিয়ে গবেষণা করতে বলেছেন এবং তা না করার জন্য তিরস্কারও করেছেন। আর গবেষণা করার জন্য তিনি কোনো কালকে নির্দিষ্ট করেননি। আর রসূল (স.) বলেছেন, তোমরা যারা এখানে উপস্থিত আছো তারা আমার এ বক্তব্য তাদের কাছে পৌঁছে দেবে যারা এখানে উপস্থিত নেই। কারণ, পরে পৌঁছানো ব্যক্তিদের মধ্যে এমন মানুষ থাকতে পারে যারা পূর্ববর্তীদের তুলনায় অধিক উপলব্ধিকারী ও রক্ষাকারী হবে।
কুরআন পড়ে মানুষের মনে যে সকল প্রশ্নের উদয় হয় অনুবাদটি পড়ে পাঠক তার অধিকাংশের উত্তর পেয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ। আর এর ফলস্বরূপ পাঠকগণ মনের প্রশান্তি নিয়ে কুরআনের ওপর আমল করতে এবং অধিকতর বলিষ্ঠভাবে কুরআনের দাওয়াত অপরের কাছে পৌঁছে দিতে পারবেন বলে আমরা মনে করি।
সনদ ও মতন সহীহ হাদীস সংকলন, ১ম খণ্ড
ইসলামে সুন্নাহ (হাদীস) জ্ঞানের দ্বিতীয় প্রধান উৎস। ‘হাদীস বা সুন্নাহ’ না হলে ইসলাম পরিপূর্ণরূপে পালন করা সম্ভব নয়। শুধু কুরআন পড়ে ইসলাম পালন করতে যাওয়ার পরিণতি হবে ম্যানুয়াল পড়ে একটি জটিল যন্ত্র পরিচালনা করতে যাওয়ার পরিণতির অনুরূপ। বর্তমানে পৃথিবীর সকল কোম্পানি কোনো জটিল যন্ত্র বিক্রি করলে সেটির সাথে একটি ম্যানুয়াল (পরিচালনার পথনির্দেশিকা) এবং একজন ইঞ্জিনিয়ার পাঠায়। ইঞ্জিনিয়ার জটিল যন্ত্রটি পরিচালনা করে ভোক্তাদের দেখিয়ে দেয়। দেখানোর সময় ইঞ্জিনিয়ারকে ম্যানুয়ালের বাইরেও কিছু কথা বলতে হয়। সে কথাগুলো ম্যানুয়ালে থাকা বিষয়ের অতিরিক্ত কিন্তু বিপরীত নয়। কোনো ভোক্তা যদি শুধু ম্যানুয়াল পড়ে জটিল যন্ত্রটি চালাতে যায় তবে সে তাতে কোনোভাবেই সফল হবে না বরং এটিতে তার ও যন্ত্রটির ক্ষতি হবে।
মহান আল্লাহ মানুষরূপী অত্যন্ত জটিল প্রাণী বানিয়ে তার পরিচালনার মূল পদ্ধতি ধারণকারী কিতাব ও সে কিতাব অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করে মানুষকে দেখিয়ে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন নবী-রসূল পাঠিয়েছেন। ঐ কিতাবের শেষ সংস্করণ হলো আল কুরআন। আর কুরআন বাস্তবায়ন করে মানুষকে দেখিয়ে দেওয়ার জন্য রসূল হলেন মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ (স.)। তাই, মানুষ যদি শুধু কুরআন পড়ে জীবন পরিচালনা করতে যায় তবে সে নিজের ও ইসলামের ক্ষতি করবে।
জীবন সম্পর্কিত আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞানের উৎস হলো- কুরআন, সুন্নাহ ও আকল (বোধশক্তি, বিবেক বা Common Sense)। বিজ্ঞান (ঝপরবহপব) হলো আকলের মাধ্যমে উদ্ভাবিত বিশেষ জ্ঞান। মহান আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞানের তিনটি উৎসের মধ্যে তাত্ত্বিক (Theoretical) পার্থক্য হলো- কুরআন, আল্লাহ প্রদত্ত মূল প্রমাণিত জ্ঞান। সুন্নাহ, আল্লাহ প্রদত্ত প্রমাণিত জ্ঞান। এটি কুরআনের ব্যাখ্যা। আর আকল, জন্মগতভাবে আল্লাহ প্রদত্ত সাধারণ (অপ্রমাণিত) জ্ঞান। অন্যদিকে উৎস তিনটির মধ্যে ব্যবহারিক (Practical) পার্থক্য হলো- কুরআন (আল্লাহ তা‘য়ালা), মালিক এবং মূল ব্যাখ্যাকারী। সুন্নাহ (রসূল স.) মালিকের নিয়োগকৃত কুরআনের ব্যাখ্যাকারী। আর আকল মালিকের নিয়োগকৃত ইসলামের ঘরের দারোয়ান। উল্লিখিত তথ্যগুলো পর্যালোচনা করলে সহজে বোঝা যায়, গুরুত্বের দিক দিয়ে আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞানের তিনটি উৎসের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য বিদ্যমান। তবে জীবন সম্পর্কিত নির্ভুল ও পরিপূর্ণ জ্ঞানার্জন করতে হলে উৎস তিনটির প্রত্যেকটির যথাযথ ব্যবহার অপরিহার্য।
বর্তমান মুসলিম সমাজে আকল জ্ঞানের উৎস হিসেবে চালু নেই। এর ফলে দারোয়ান না থাকায় ইসলামের ঘরের অনেক মূল তথ্য চুরি হয়ে গেছে। মানব সভ্যতার শত্রু ইবলিস শয়তান ও তার দোসররা যে পদ্ধতিতে আকলকে জ্ঞানের উৎস থেকে বাদ দেওয়াতে সক্ষম হয়েছে তা হলো- প্রথমে মু‘তাজিলা (প্রতিষ্ঠাতা ওয়াসিল ইবনে আতা, জীবনকাল ৮০-১৩১ হি.) নামে একটি দল তৈরি করা হয় এবং তাদের মাধ্যমে কুরআন ও সুন্নাহর চেয়ে আকলকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে প্রচার করানো হয়। অর্থাৎ মু’তাজিলাদের মাধ্যমে প্রচার করানো হয়- কোনো বিষয়ে কুরআন ও সুন্নাহর সাথে আকলের দ্বন্দ্ব হলে কুরআন ও সুন্নাহর রায় বাদ দিয়ে আকলের রায়কে গ্রহণ করতে হবে। এ কথায় সকল মুসলিম যখন ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠলো তখন অন্যদের মাধ্যমে আকল জ্ঞানের কোনো ধরনের উৎস হওয়ার যোগ্য নয়- কথাটি প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং তা এখনও প্রতিষ্ঠিত আছে। এটি দুষ্টদের একটি অতিপ্রিয় কর্মনীতি। কর্মনীতিটি হলো- If you want to kill a good dog give him a bad name and then kill him. অর্থাৎ যদি তুমি কোনো ভালো কুকুরকে হত্যা করতে চাও, তবে তার নামে মন্দ কথা ছড়িয়ে দাও; পরে তাকে হত্যা করো।
একই কর্মনীতির মাধ্যমে ইবলিস শয়তান ও তার দোসররা হাদীসকে ইসলামের জ্ঞানের উৎস থেকে বাদ দেওয়ার প্রচেষ্টায় অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে। বর্তমানে আহলুল কুরআন নামের একটি দল দ্রুতবেগে এগিয়ে আসছে। এরা কুরআন মানে কিন্তু হাদীস মানে না। বর্তমান মুসলিম সমাজে হাদীস সম্পর্কিত চালু দু’টি কথা আহলুল কুরআনদের সমর্থক সংগ্রহে দারুণভাবে সাহায্য করছে। কথা দু’টি হলো-
১. (প্রচলিত) সহীহ হাদীস কুরআনের বিপরীত হলেও তা মানতে হবে বা তার বিরুদ্ধে কোনো কথা বলা যাবে না।
২. হাদীস কুরআনকে রহিত করতে পারে।
এ কথা দু’টি যেকোনো আকলসম্পন্ন মুসলিমকে অবশ্যই হাদীসের বিরুদ্ধে ক্ষুদ্ধ করে তুলবে এবং তুলছে। আর এ মানুষগুলোর অনেকে আহলুল কুরআনদের দলে ভিড়ে যাচ্ছে। আহলুল কুরআনরা সফল হলে আল্লাহর নিয়োগকৃত কুরআনের ব্যাখ্যাকারী এবং পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষটির মানব কল্যাণমূলক অসংখ্য কথা হারিয়ে যাবে। ফলে মানব সভ্যতা অপরিসীমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
তাই, হাদীস নিয়ে অতীতে আমাদের মনীষীগণ অনেক কাজ করেছেন এবং এ কাজের জন্য তারা অবশ্যই আল্লাহ তা‘য়ালার কাছ থেকে যথাযথ পুরস্কার পাবেন। কিন্তু হাদীস নিয়ে আরও কাজ বাকি রয়েছে। এ বিষয়গুলোকে সামনে রেখে ‘কুরআন রিসার্চ ফাউন্ডেশন’ হাদীসশাস্ত্রের সংস্কারের ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা শুরু করে। সে চিন্তা-ভাবনার চূড়ান্ত রূপের প্রকাশ হলো সনদ ও মতন সহীহ হাদীসের এ খণ্ডটি (১ম খণ্ড)। এ কাজ চলতে থাকবে, ইনশাআল্লাহ।
এ কাজ করার জন্য আমাদের চেয়ে অধিক যোগ্য ব্যক্তি মুসলিম বিশ্বে উপস্থিত আছে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। আশাকরি অনেকেই এখন এ কাজ করার জন্য এগিয়ে আসবেন। এ কাজ, হাদীসকে জ্ঞানের উৎস থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দেবে, ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আমাদের এ প্রচেষ্টাকে কবুল করুন। আমিন! সুম্মা আমিন!!
Reviews
There are no reviews yet.